প্রথমে সুন্নাহ দেখি
রাসুলুল্লাহ ﷺ এর সময় উনি মুসাহাফা কররার পরে অন্য জন হাত না সরিয়ে নিলে নিজে সরাতেন না।
কেউ কথা বলতে থাকলে সম্পূর্ন ঘুরে তার দিকে মুখ করে শুনতেন।
সে যতক্ষন কথা বলছে ততক্ষন উনি কথা শুনতেন।
... এবং আরো। উনার উপর সালাম।
কিন্তু আমি নিজের ক্ষেত্রে দেখছি উল্টো করছি
মানুষের কথা শেষ হয় না। একজনের কথা শুনতে থাকলে সে সারা দিন কথা বলতে থাকে আমি কোনো জবাব না দিলেও। ৪ ঘন্টা ধরে একজন অনবরত কথা বলে গিয়েছে এমনো পার করেছি। এর পরও তার কথা শেষ হয় না।
হাজার হাজার লোক। সবারই কিছু বলার আছে। প্রত্যেকেরই কিছু চাওয়ার আছে। কিন্তু সবার সাথে সে যতক্ষন কথা বলতে চায় ততক্ষন কথা শুনতে থাকলে সারা দিন পার হয়ে যাবে কথা শুনতে শুনতে এর পরও ১০০০ লোকের মাঝে ২০ জনের সব কথাও শোনা হবে না।
পার্থক্য কি?
রাসুলুল্লাহ ﷺ এর সময় মদিনা শরিফের জনসংখ্যা ছিলো দেড় হাজার ১,৫০০। এর মাঝে বাচ্চা মহিলা বাদ দিলে লোক হয়তো ৩০০ জন।
বর্তমানে তাকাই। আমাদের এক একজনের ফলোয়ার ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার। আর শুধু ফলোয়াররাই তো কেবল কথা বলতে চায় না। সবাই চায়। ননফলোয়ার দূরের কাছের। যেই আমাকে তার কাছে পায় সবার কিছু কথা আছে।
এবং কাছে পাওয়া এখন সহজ
ফেসবুকে এলেই ঘরে বসে দেশের যে কারো সাথে কথা বলতে পারছেন।
মোবাইল তুললেই জানা অজানা সবার সাথে কথা বলতে পারছেন।
রাস্তায় বেরুলেই আমাদের এই এলাকায় কেবল ২ লক্ষ মানুষ থাকে। এই শহরে ২ কোটি। দেশের বাকিদের বাদ দিলেও বিদেশেরও যে কেউ চাইলেই কথা বলতে পারছে।
এবং সবার কিছু না কিছু চাওয়ার আছে
ব্যাংক থেকে মাসে দুই বার করে ফোন -- তারা চায় আমার সাথে কথা বলে কনভিন্স করতে যেন আমি বেশি টাকা রাখি তাদের ব্যাংকে। যেন তাদের ক্রেডিট কার্ড নেই। আরো কতো কি।
সারা জীবনে যাদেরই কিছু না কিছু দান করেছিলাম তাদের প্রত্যেকেই ১০ বছর পার হলেও প্রতি সপ্তাহে আমার সাথে "কিছু কথা" বলতে চায় -- আশা, যদি কনভিন্সড করতে পারে আমাকে তাদেরকে এই বার কিছু দেয়ার জন্য।
পরিচিত অল্প-পরিচিতরা চায় তাদের ছেলে পাশ করে বের হয়েছে যদি তার একটা চাকরির ব্যবস্থা করতে পারি আমাদের কম্পানিতে।
বা সেইলস ম্যান। চায় আমি তাদের কিছু প্রমোট করি। দ্বিনের গ্রুপগুলো চায় আমি তার পক্ষে বলি। তার দলে যোগ দেই। এটা বা ওটা না বলি।
মসজিদে গিয়ে বসে থাকবো? ইমাম সাহেবও কথা বলতে চায়। চায় তাদের মাদ্রাসারা জন্য এই মাসেও দান তুলতে।
সবারই কিছু চাওয়ার আছে। হাজার হাজার জনের। কিন্তু প্রথমে চাওয়ার আগে আমার সাথে কথা বলতে চায়, চায় একটা সম্পর্কের চেষ্টা করতে। একটা সিড়ি সেই চাওয়ার দিকে।
তাই কারো কথা শেষ হয় না।
"সবাইকে খুশি রাখতে পারবেন না"
একটা হাদিসে আছে "তুমি দান করে সবাইকে খুশি রাখতে পারবে না। তাই ভলো ব্যবহার করে খুশি রাখো।"
কিন্তু সমস্যা। ব্যাক্তি জীবনে এলাকায় হয়তো দিনে ১০ জনের বেশি মানুষের সাথে দেখা হয় না। কিন্তু এই নেট মোবাইল কমুনিকেশনের যুগে দিনে ১০ হাজার লোক আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারে। সবাইকে ভালো ব্যবহার করেও খুশি রাখা যায় না। কেবল ব্যক্তি জীবনে যে ১০ জনের সথে দেখা -- কথা বলে তাদেরকে খুশি রাখার চেষ্টা করা সম্ভব।
কেবল আমার এ অবস্থা?
তাও না। অনলাইনের ঘটনা। একজন কড়া কমেন্ট করছিলো আরেক জনকে লক্ষ্য করে, "আমার মেইলের উত্তর দেন না কেন? তিন তিন বার পাঠিয়েছি!"
সে জবাব দিলো দিনে ১০০০ ইমেইল আসে আমার ইনবক্সে প্রতিদিন। ১০ টা উত্তর দেই তার পর বাকি সব ডিলিট। পরের দিনে আবার ১০০০ ইমেইল।
সর্বত্রই এই অবস্থা। কোনো লোক একটু এক্সপোজার পেলেই হলো। তার এই অবস্থা। এক্সপোজার না পেলেও মানুষ খুজে নেয় তাকে যাকে তার দরকার।
তাই খারাপ ব্যাবহার? নাকি ব্লক?
না। বরং ব্লক। যোগাযোগ ছিন্ন করে দিন। খারাপ ব্যবহার করার দরকার নেই।
এত এত মানুষের দরকার নেই জীবনে যোগাযোগ করার জন্য। কথা বলার, চ্যাট করার জন্য। ছাত্র জীবনে সময় ছিলো তখন করতাম। এখন দরকার নেই।
নিজের আত্মিয়দের দিকে তাকাই। নিজের পরিবারের দিকে তাকাই। নিজের পিতা মাতা ভাই বোনের দিকে থাকাই। এর পর এলাকা বাসি। এরাই যথেষ্ট।
মোবাইল - নেট - ফেসবুক - চ্যাট - ইমেইল -- এগুলোতে প্রয়োজনের বাইরে কিছু পেলেই ব্লক। কারন একটাই -- দরকার নেই। সেধে বিপদ আনা।
এমন কি "সুন্দর ব্যবহার করে এর পরে তাকে না বলা"-র ও দরকার নেই। কিছু বলারই দরকার নেই। কোনো জবাব দেয়ার দরকার নেই।
তাই ব্লক।
শেষে সুন্নাহতে ফিরে আসি
রাসুলুল্লাহ ﷺ এর যুগে কোনো ঘটনার পরে উনার বাসায় মানুষ বসে অনেকক্ষন কথা বলছিলো। সে পরিপেক্ষিতে আয়াত নাজিল হয় "তোমরা রাসুলুল্লাহ ﷺ কে কষ্ট দিও না।"
বিস্তারিত পাবেন তফসিরের কিতাবে। আমি আলেমদের থেকে শুনেছি।
তাই হয়তো যা করছি সেটা অনেক বড় পাপ না।
এভাবেই পথ চলা।