আকিদা : নিরাপদে চলা

 
Written By Sanjir Habib On Jan-31st, 2018

আকিদা : নিরাপদে চলা।

আশারি-আথারি

৭০ এর দশক। পাঠ্য বইয়ে একটা গল্প।

এক বুজুর্গ। ছাত্রদের পরিক্ষা নেবার জন্য সবাইকে একটা কবুতর দিয়ে বলেন এমন জায়গায় জবাই দিয়ে আনো যেন কেউ না দেখে। শুধু একজন ফিরে বলে “আমি এমন কোনো জায়গা পেলাম না যেখানে আল্লাহ দেখছেন না।”

উনি বললেন তোমার শিক্ষা পূর্ন হয়েছে।

ঐ সময় আল্লাহ সর্বত্র আছেন বিশ্বাস করা ছিলো উচ্চ তাকওয়ার নিদর্শন। আল্লাহ তায়ালা সর্বত্র আছেন মানে মানুষ আল্লাহর ভয়ে গুনাহ করতে ভয় পাবে। কেউ যদি সে বিশ্বাস না করে বিশ্বাস করেন আল্লাহ শুধু আকাশের উপর আছেন? তবে সে সাধারন মুসলিম।

আমি মনে মনে প্রশ্ন করতাম : তাহলে টয়লেট বা ময়লা জায়গাগুলোতে উনি নিশ্চই নেই? কচি মনের প্রশ্ন। মুখে বলার সাহস করতাম না।

৪০ বছর পর : সৌদি শায়েখদের কাছে ঐ একই প্রশ্ন শুনেছি।

৮০ এর দশক। টাইম, স্পেইস, ডাইমেনশন এগুলো শিখতে লাগলাম। আল্লাহ তায়ালার ফিজিক্যল এট্রিবিউটস কি?

জানলাম এই ধরনের প্রশ্ন করা নিষেধ। এগুলো নিয়ে চিন্তা করাও নিষেধ। তাফাক্কারু ফি খালকিল্লাহ, ওয়ালা তাতাফাক্কারু ফিল্লাহ। আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করো, কিন্তু উনার ফিজিক্যল এট্রিবিউটস নিয়ে চিন্তা করো না। এটা করা নিষেধ।

এটা ভালো মনে হয়েছে। নয়তো হাজারো চিন্তা-উপলব্ধি-প্রশ্ন-ধারনা মনে ভীড় করে জমতে থাকতো। যেগুলোর কোনো নিশ্চিৎ উত্তর নেই।

৯০ এ। কোরআন শরিফের একটা বড় অংশ ইতিমধ্যে শিখে ফেলেছি। সৃষ্টির পরে আল্লাহ তায়ালা আরশে সমাসিন হয়েছেন কথাটা যেমন পেয়েছি। তেমনি দুনিয়াতে এমন তিন জন কোনো কথা আলোচনা করে না যেখানে আল্লাহ তায়ালা চতুর্থ জন হিসাবে উপস্থিত নেই। বা পাচ জন যেখানে উনি ষষ্ঠ জন না একথাও পেয়েছি। দুটোর মাঝে আমার কোনো কন্ট্রাডিকশন লাগে নি। স্বাভাবিক। পড়ে সামনে এগিয়ে গিয়েছি।

দেশে ইন্টারনেট আসে। সবাই ঝাপিয়ে পড়ে নেটে। আমিও। ফেসবুক আসতে আরো ১০ বছর বাকি। কিন্তু আমাদের কথা আদান প্রদানের জন্য অন্য মিডিয়াম আছে। Yahoo mailing list. ইমেইলে চলতো আলোচনা-তর্ক-প্রচার। দুনিয়ার হাজার হাজার মুসলিম এখানে ভিড় করে। কয়েকশত গ্রুপে।

এক ভাই এসে বলে “আল্লাহ সর্বত্র আছেন” এটা ঠিক না। বরং বিশ্বাস করতে হবে উনি শুধু আরশের উপর আছেন।

আরেকজন এর উপর যোগ করে বলেন “শুধু ঠিক না” তা নয়, বরং সর্বত্র বিশ্বাস করা কুফর। এখানে নিউট্রাল অবস্থান নেবার সুযোগ নেই। জানি না বলে কেউ এড়ালে সেও কাফির। ওমর রা: এর উক্তি “যে বললো আমি জানি না আল্লাহ আসমানে আছেন নাকি জমিনে, সে কাফির।”

উল্লেখ্য এই উক্তিটা এখন আবু হানিফা রাহি: এর নামে প্রচার হয়। কিন্তু তখন প্রাচার হচ্ছিলো ওমর রা: এর নামে।

ফিতনা আরম্ভ।

৯৮ এ সম্ভবত শেষ আশারির পক্ষে মাত্র এক জনকে নেটের সোশাল মিডিয়াতে মাত্র একটা পোষ্ট দিতে দেখেছি। এর পর ১৫ বছর ধরে নেটে আথারি দর্শনের এক চেটিয়ে আধিপত্য ছিলো। আশারির পক্ষে কেউ নেই।

প্রচারনাগুলো মূলতঃ সীমিত ছিলো বিদেশে। বাংগালিরা তখনো নেটে আসে নি। এবং বাংগালি যারা আসতো, তারা বিদেশ থেকে আসতো, প্রবাসী। ১৩ সালের আগেও ফেসবুকে বাংগালি যে আলমগন ছিলেন প্রায় সবাই ছিলেন সৌদি থেকে শিক্ষিত। সৌদি থেকে বলছেন বা ডিগ্রি শেষ করে দেশে ফিরছেন এরকম।

উনারা আথারি মতাদর্শই প্রচার করতেন।

কিতাবে আশারি - আথারির সংগা কি সেটায় না গিয়ে ময়দানে কিভাবে প্রচার হতো সে দিকে ফোকাস দিচ্ছি।

হাদিস : মরুভূমিতে এক মেয়েকে জিজ্ঞাসা করা হলো “বলোতো আল্লাহ কোথায়?” জবাব দিলো “আসমানে” রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন সে মুসলিম।

এই হাদিস দিয়ে প্রমান দেয়া হতো এই ব্যপারে স্পষ্ট করে বলতে হবে আল্লাহ তায়ালা সর্বত্র না বরং শুধু আসমানে আরশের উপর। স্পষ্ট করে এই সাক্ষ্য না দিলে সে কাফির। দলিল এই হাদিস।

“যে বললো আমি জানি না আল্লাহ আসমানে নাকি জমিনে সে কাফির” এই উক্তি দিয়ে প্রমান করা হতো এই ব্যপারে যে অজ্ঞতা প্রকাশ করবে সেও কাফির। স্পষ্ট করে সাক্ষি দিতে হবে আল্লাহ তায়ালা শুধু আরশের উপর।

কোরআন থেকে এর পক্ষে দলিল ছিলো কোরআন শরিফের ঐ আয়াতগুলো যেগুলোতে বলা আছে থুম্মাসতাওয়া আলাল আরশ। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা আরশে সমাসিন হলেন।

আর যেগুলোতে বলা আছে উনি মানুষের কাছে আছেন বা সাথে আছেন, সেগুলো? এই আয়াতগুলো উনাদের কাউকে উল্লেখ করা বা ব্যখ্যা করতে দেখি নি। আমার মনে হতো আমি যেন একাই এগুলো জানি। আর কোনো আলোচনা নেই।

কোরআন নিয়ে তর্কে রিলাকটেন্ট ছিলাম বলে আমি প্রশ্ন করতাম না।

১০

এর পর একদিন সাহস করে একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম, “ভাই তাহলে এই আয়াতের ব্যখ্যা কি করে করবেন?” বললেন এখানে বিশ্বাস করতে হবে “উনি উনার ইলম দ্বারা সর্বত্র আছেন।”

একটা ব্যখ্যা পেলাম। এর পর নিজের ভাবার বিষয়। ততক্ষনে ১০ বছর পার হয়ে গিয়েছে। এ দ্বন্ধ বাংলাদেশেও স্ট্রাইক করেছে।

১১

ছোটবেলা থেকেই আমাদেরকে শিখানো হয়েছিলো আল্লাহ তায়ালার সিফত নিয়ে চিন্তা করো, জাত নিয়ে না। কথাটা ৮ বছর বয়সে শুনলেও জাত আর সিফত কি সে পার্থক্য বুঝতে আরো বহু বছর লেগেছিলো। কিন্তু বুঝার পর থেকে এটাই মেনে এসেছি।

১২

আমরা মনুষরা থ্রি-ডাইমেনশেনাল স্পেইসে থাকি। ফোর ডাইমেনশনাল কেউ যদি আমাদের সামনে নিজেকে দেখা দেয় তবে তাকে একই সময়ে বহু জায়গায় দেখা যাবে, যদিও সে মানুষ একজন। ঐ যুগটা ছিলো স্ট্রিং-থিউরির স্বর্নযুগ, ডাইমেনশন বাড়তে বাড়তে তখন ১০ এ।

প্রশ্ন, আল্লাহ তায়ালা কত ডাইমেনশনাল জগতে আছেন?

এই ধরনের চিন্তা করা পাপ, নিষেধ। কারন এগুলো জাত নিয়ে চিন্তা, ফিজিক্যল এট্রিবিউটস। মনগড়া কথা। এমন বিষয়ে নিজের কথা বলা যে বিষয়ে আমার ইলম নেই। তাই চিন্তা করতে হয় উনার সিফত নিয়ে। গুনাবলী, উনার কত শক্তি, কত দয়ালু, কত বড়। এবং এগুলো বুঝতে হয় উনার সৃষ্টি দেখে। উনার আকৃতির কথা চিন্তা করে না।

এই পর্যন্ত all good.

১৩

কিন্তু আশারি-আথারি তর্কে যারা ময়দান কাপিয়ে ফেলছিলো তারা এই জাত-সিফতের পার্থক্যের বিষয়টি তুলছে না কেন? আমার মনে হতো তারা এখানে আল্লাহ তায়ালার জাত এর বিষয়ে তর্কে ব্যস্ত। যেটা আমাদেরকে আগে শেখানো হয়েছিলো নিষেধ।

কিন্তু তাদেরকে এই প্রশ্ন করতে পারতাম না। কারন “জাত-সিফত” শব্দগুলো উর্দু। এবং তারা সহি হাদিসের বাইরে কিছুতে আগ্রহি না।

নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলাম : এই নিষেধাজ্ঞা কি কোনো হাদিস থেকে এসেছে?

১৪

এই দেশে জুম্মার আরবী খুতবার প্রথম খুতবার শেষ কথাটা সাধারনতঃ ইমাম সাহেব কোনো রেন্ডম হাদিস দিয়ে শেষ করেন। এক জুম্মায় ইমাম শেষ করলেন জাত-সিফতের উপর একটা হাদিস দিয়ে।

আরবী কথা শুনলে সেটা টাইপ করতে পারি। এখন জেনে নেটে সার্চ দিলাম হাদিসটা। কিছুটা ভিন্ন ভিন্ন শব্দে বহু কিতাবে এসেছে।

কংক্লুশন দেখলাম, হাদিসটা কিছু জয়িফ বর্ননায় এসেছে, কিছু ভালো বর্ননায় এসেছে। কিন্তু এর উপর আর আলোচনা টানা হয় নি। এর সাথে আথারি-আশারি তর্কের কি হবে সে আলোচনা নেই।

সবগুলো সাইট সালাফিদের কারন নেটে হানাফিদের উপস্থিতি তখন খুবই কম।

১৫

আহলে হাদিস ডট কম সাইটে [আরবী সাইট] এর সবগুলো রেওয়ায়েত উল্লেখ আছে। কিন্তু শায়েখ এর অর্থ ব্যখ্যা না দিয়ে বলেছেন ব্যখ্যা দিতে হলে আরো বড় কাউকে লাগবে।
http://www.ahlalhdeeth.com/vb/showthread.php?t=29855

এর কিছু হাদিস আমি অনুবাদের চেষ্টা করেছি এখানে। কিন্তু পরবর্তিতে শেষ করা হয় নি।
https://sanjir.com/4352/

উপরেরটা ২০০৫ সালের পোষ্ট। বহু রেওয়ায়েতের মাঝে কিছু রেওয়ায়েত জয়িফ সেগুলো মার্ক করা আছে। বাকি হাদিসের ব্যপারে আপত্তির তেমন নেই।

ইসলাম কিউ এ তে এই ব্যপারে কোনো উল্লেখ ছিলো না বহু বছর। এখন সার্চ দিয়ে দেখি প্রশ্ন উত্তর এসেছে গতবছর [২০১৭ তে]। কিন্তু ফিনিশিংয়ে আশারি-আথারি তর্কের কি হবে তার জবাব পাই নি।
https://islamqa.info/ar/260258

উপরের লিংক আরবীতে। এই প্রশ্নোত্তরের ইংরেজি অনুবাদ এখনো হয় নি।

আকিদা - ৪ : আশারি-আথারি

১৬

ব্যক্তিগত ভাবে আমার কাছে এই দন্ধ অর্থহীন। সবাইকে মুসলিম হিসাবে দেখি।

কেউ বললো “আল্লাহ আরশের উপর আছেন”, তো ঠিক আছে।

কেউ বললো “সর্বত্র আছেন।”, সে কি অর্থে বলেছে? স্বশরিরে আছেন বুঝিয়েছে? কে জানে, আমি জানি না! সে এমন কোনো কথা যোগ করে নি। কোনো ব্যখ্যা দেয় নি। আল্লাহ তায়ালাও বলেছেন উনি সব মানুষের কাছে আছেন, সংগে আছেন। কোনো ব্যখ্যা ছাড়াই। দুজনের কথা একই। তাই আমার এখানেও আপত্তি নেই।

কিন্তু অমি দেখতে পাচ্ছি আল্লাহ তায়ালা যখন এই কথা বলেন কোনো ব্যখ্যা ছাড়া তখন তারা এর অর্থ ধরছেন একরকম। উনি ইলম দ্বারা বুঝিয়েছেন।

এবং মানুষ যখন একই কথা বলে এবং কোনো ব্যখ্যা ছাড়া, তখন সেটার ব্যখ্যা তারা ধরছে ভিন্ন রকম। সে স্বশরিরে বুঝিয়ে বলেছে।

এর পর একই কথার দুই রকম ব্যখ্যা ধরে আমাকে ফোর্স করা হচ্ছে কিছু লোককে কাফের ঘোষনা দেবার জন্য।

যদি না দেই তবে আমি আশারি-মাতুরিদি। আমিও কাফের। যেহেতু স্পষ্ট করে আমাকে এই সাক্ষি দিতে হবে।

১৭

আশারি-মাতুরিদিরা জঘন্য। বাতেল কাফের। এটা আমি নেটে বহু বছর ধরে শুনতে থাকি। ২০১০ এর আগ পর্যন্তও আমি জানতাম না এরা কারা। ধারনা করতাম হয়তো মুতাজিলাদের মত আদি কোনো সম্প্রদায় হবে, যাদের অস্তিত্ব এখন আর নেই। কাল্পনিক দল।

২০১০ এর পর জানি হানাফি মাজহাবের সবাই আশারি মাতুরিদি।

কিন্তু “<এই এই> কথা যে বললো সে কাফের” এই দাবিকে কখনো সমর্থন দিতে পারি নি। চুপ থাকতাম।

১৮

কিন্তু চুপ থাকাটা বাচাতে পারতো না সব সময়।

“আপনি চুপ আছেন কিন্তু যদি আপনি অন্তরেও বিশ্বাস করেন <এই> তবে আমার দৃষ্টিতে আপনি কাফের।” – একজনের কমেন্ট।

“আমি এই উপমহাদেশের দেশগুলোতে গিয়ে রাস্তায় অনেকে জিজ্ঞাসা করেছি বলেন তো আল্লাহ কোথায়? সবাই জবাব দিযেছে উনি সবজায়গায়। তাই সেই সব দেশের সবাই কাফের।” – একজনের শায়েখের কথা।

তারা জিজ্ঞাসা করবে, আমাকে তাদের কথা স্পষ্ট করে সাক্ষ্য দিয়ে বলতে হবে। এখানে লুকোচুরি বা হিকমতের সাথে কিছু করার লক্ষন দেখা দিলে আমি তাদের কাছে কাফের।

এটা স্পষ্ট।

১৯

অবশেষে একদিন কোরআন শরিফ নিয়ে বসলাম। আজকে আমার আকিদা পরিবর্তন করবো।

যত জায়গায় আল্লাহ তায়ালা বলেছেন উনি আরশ ভিন্ন অন্য কোথাও আছেন, সব জায়গায় উনি ইলম দ্বারা বুঝিয়েছেন। ঠিক?

চেক করা আরম্ভ করলাম। আমার যতটুকু মুখস্ত ছিলো তারা মাঝে ৬ জায়গায় ছিলো এমন আয়াত। এবং পড়ার সময় এই আয়াতগুলো অন্তরে স্ট্রাইক করতো অনেক বেশি। ওয়া ইদা সাআলুকা ইবাদি আন্নি ফা ইন্নি কারিব। এই অংশে এসে তিলওয়াতকারি আটকে না গিয়ে পারে না।

সব জায়গায় আল্লাহ তায়ালা বুঝিয়েছেন উনার ইলম দ্বারা?

বলা যায়। কিছু জায়গায় উনার ইলমের কথাই আলোচনা হচ্ছিলো তাই। অন্য জায়গাগুলোতে কেউ এরকম দাবি করলে অস্বিকার করার উপায় নেই।

২০

এর পর ডাবল ব্লাইন্ড টেষ্ট। সাইন্সে শিখেছি।

এরকম আশারি মাতুরিদিরাও কি দাবি করতে পারে যেখানে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন উনি আরশের উপর আছেন তখন <এই> দ্বারা বুঝিয়েছেন?

<এই> এর জায়গায় কিছু বসানোর স্কোপ আছে? পড়তে থাকলাম। পেলাম। সব জায়গায় উনি উনার শক্তির কথা বলেছেন। কিভাবে উনি মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন। কি করে উনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। উনার ক্ষমতার কথা, শক্তির কথা।

এগুলো কোনোটাই নতুন না। চাইলে যে কোনো কথা এনেই বলা যায় আমার এই দাবি কোরআন শরিফ দ্বারা স্বিকৃত। বক্রদের বক্রতা এটা বৃদ্ধি করে আর যে সরল চায় তাকে এটা সরল পথ দেখায়।

নিজেকে প্রশ্ন : আমার অন্তর কি বক্র হয়ে আছে? নাকি আমি সরল পথে?

২১

আমার মত ভুল হতে পারে। এবং আমি বুঝতেও পারবো না যে ভুল। কিন্তু অধিকাংশের মত কি? অধিকাংশ মুসলিমরা কোন দিকে?

ইতি মধ্যে শায়েখ মতিউর রহমান মাদানি উনার ভিডিওগুলো ইউটুবে আপলোড করা আরম্ভ করছেন ২০১০ এর দিকে। এবং এগুলোতে উনি বলছেন এই উপমহাদেশের দেওবন্দি আলেমগন সবাই বাতেল, ভুল শিক্ষা দেন, বিপথগামী। কারন তারা কুফরি আশারি আকিদায় বিশ্বাসি।

বাংগালি যুবকরা এর পাচ বছর পরে এসে কমেন্ট করে যাচ্ছিলো “উপমহাদেশের কিছু আলেমরাই শুধু আশারি-মাতুরিদি। অন্য জায়গার হানাফিরাও আশারি না।”

তবে Exaggeration ফেসবুকে নতুন না। অভিজ্ঞতা আছে এ দৃশ্য দেখার যে ইচ্ছাকৃত কেউ ফেসবুকে ভুল তথ্য দিচ্ছে কারন তাদের দাবি, “এতে শেষ পর্যন্ত মানুষ হকের উপর আসবে"।

সাবধানে পা ফেলতে হয়।

২২

তবে মুসলিমদের কত পার্সেন্ট আশারি? প্রথম প্রশ্ন হানাফিদের মাঝে আশারি যারা না তাদের শিক্ষা কি?

এদের পাওয়ার প্রথম উপায় ধারনা করলাম ইসলাম-কিউএর হানাফি সাব-সেকশন হবে। কারন আমার বিশ্বাস ছিলো হানাফিদের মাঝে নন-আশারিকেই তারা আনবে। যেহেতু এটা তাদের কাছে ঈমান আর কুফর এর মাঝে পার্থক্য।

সাইটে ঢু মারলাম। এবং অবাক হয়ে দেখলাম হানাফি সেকশনে সবাই আশারি-মাতুরিদি। এবং সেই আলেমগন ধুমিয়ে ধোলাই করেছে আথারিদের।

বুঝলাম “শুধুমাত্র এই উপমহাদেশের কিছু লোক আশারি এবং বাকি দুনিয়ার সব আথারি”, এটা ভুল তথ্য।

২৩
অন্যান্য মাজহাবে? শাফি মাজহাবের অনুসারিরা সুফিবাদের অনুসারক হানাফিদের থেকেও বেশি। তাদের মত কি? এরা যদি আশারি না হয় তবে বুঝবো শুধু হানাফিরাই আশারি। আর কেউ না।

খুজলাম। পেলাম শাফিরাও সবাই আশারি। সংগে তাদের সব বড় বড় ইমামদের নাম আশারিদের লিষ্টে।

২৪

শেষে মালিকি। লাষ্ট রিসোর্ট হিসাবে আমি মালিকি মত দেখি কারন তারা দুনিয়ার উল্টো প্রান্তে আফ্রিকায় থাকে। তাই হানাফিদের দ্বারা প্রাভাবিত হবার আশংকা মুক্ত। এরা আথারি হলে ধরে নেবো উম্মাহ ৫০-৫০% এ বিভক্ত।

খুজলাম। পেলাম। মালিকিরা সবাই আশারি। এটা ছিলো আমার কাছে শকিং!

লিংকগুলো এই পোষ্টে শেয়ার করেছিলাম।

https://www.facebook.com/habib.dhaka/posts/10154580333313176

২৫

এখন প্রশ্ন দাড়ালো আশারি না কারা? পেলাম হাম্বলিদের কিছু অংশও আশারি।
তাই তিন মাজহাব + হাম্বলিদের কিয়দাংশ আশারি।
সালাফি + হাম্বলিদের বাকি ও মূল অংশ আথারি।

আমার হিসাবে মুসলিমদের ৯০% আশারি।
বাকি ১০% আথারি।

২৬

কোরআনের কথাগুলো লিটারেল নাকি মেটাফরিক? এটা নিয়ে আমাকে সমস্যায় পড়তে হয় নি। সবই লিটারেল। যেখানে মেটাফরিক বলা হয়েছে বা স্পষ্টতই মনে হয়, সেখানে মেটাফরিক।

“কা মাথালি সাফওয়ানিন আলাইহি তুরাবুন” … মেটাফরিক। আল্লাহ তায়ালা বলে দিয়েছেন।

২৭

এর পর দেখলাম সেই দল এই সাক্ষি চাচ্ছে যে,
১। আল্লাহ তায়ালা আরশের উপর আছেন, এটা আমাকে লিটারেল ধরতে হবে।
২। কিন্তু, উনি সব মানুষের সাথে আছেন এটাকে বলতে হবে মেটাফরিক, মানে ইলমের দ্বারা।
৩। এর পর আমাকে স্বিকার করতে হবে কোরআনে মেটাফরিক বলে কিছু নেই।

মনে হলো জোর করে কেউ কিছু মিলানোর চেষ্টা করছে।
স্পষ্টতই নিজের ব্যখ্যা নিয়ে কেউ সমস্যায় আছে।

২৮

তবে চ্যলেঞ্জ করার উপায় নেই, বলবে “সুক্ষ্ম বিষয়” আলেম ছাড়া বুঝবে না। অথবা ওয়ার্ড প্লে, “ইলম দ্বারা বুঝিয়েছেন, এখানে মেটাফরিক কোথায় পেলেন? মেটাফরিক এর অর্থ জেনে এর পর আসবেন।”

২৯

আমার কাছে স্থুল বিষয় হতো যদি
১। দুটোকেই লিটারেল ধরা হতো, বা
২। দুটোকেই মেটাফরিক।

অথবা একটাকে লিটারেল ধরে অন্যটাকে মেটাফরিক বলেও যদি বলা হয়, “এটাই আমাদের ব্যখ্যা। আমদের উলামাগন বলে গিয়েছেন।” তবুও আপত্তির কিছু দেখি না।

ট্রাবলসাম হলো এর পর তৃতীয় পয়েন্টটা জুড়ে দেয়া “এই ব্যখ্যাই একমাত্র সঠিক ব্যখ্যা, কারন কোরআন শরিফে মেটাফরিক বলে কিছু নেই।”

কি জানি! যখন “ইলম দ্বারা” বলছেন তখনই আমি দেখতে পারছি স্পষ্টতঃই তারা মেটাফরিক ব্যখ্যা করছেন কিন্তু মেটাফরিক নাম না দিয়ে। বাকি সব এই কন্ট্রাডিকশনটা ঢাকার চেষ্টা। আমার দৃষ্টিতে।

৩০

তবে সেল্ফ কন্ট্রাডিকশন আমার কাছে বাতিল হবার কোনো দলিল না। কে জানে হয়তো এখানে আমার বোধের সিমাবদ্ধতা আছে। বা দুটো কথার কনটেক্সট ভিন্ন।

কিন্তু যখন আমি দেখি, আমার কাছে কন্ট্রাডিকটরি এমন একটা কথাকে যুক্তি ধরে, ১০% আলেম বাকি ৯০% আলেমদের বাতেল-কুফর ফতোয়া দিচ্ছেন। এবং আমাকে এর মাঝে কোনো মিডেল গ্রাউন্ড নিতে দিচ্ছে না। হয় স্পষ্টই ঐ দলকে বাতেল ঘোষনা দিয়ে এই দলে যোগ দিতে হবে, নচেৎ আমিও ঐ দলের পক্ষে এবং বাতেল-কাফের, তখন পক্ষ নিতে হয়।

এবং ৯০% এর পক্ষে।

৩১

আকিদার ব্যপারে একটা জিনিস দেখে আসছি যে এর ১০% আমার অন্তরের বিশ্বাসের সাথে জড়িত। আর এর ৯০% জড়িত আমি কি শব্দ ব্যবহার করলাম এর সাথে।

এটা আন্ডারস্টেন্ড্যব্যল। কারন আমার অন্তরের বিশ্বাস অন্য কেউ জানে না। বিশ্বাসের প্রকাশ হলো কথায়।

এর পর কথা থেকে ধাপে ধাপে আসে ওয়ার্ড প্লে। কোন শব্দের কি অর্থ সেটা নিয়ে তর্ক। কোথায় কোন শব্দ ব্যবহার করা যাবে বা যাবে না, এগুলো নিয়ে।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে শেষে গিয়ে স্টিক করা হয় কোরআনের আরবী শব্দটার সাথে, “এর কোনো অনুবাদ হয় না, এর অর্থ এটাই।”

৩২

আচ্ছা, জাত আর সিফত অর্থ কি? অল্প বয়স্ক কেউ যদি এটা “জানার জন্য” জিজ্ঞাসা করে, আর আপনি তাকে বুঝানোর মত করে ব্যখ্যা দেন। এর পর আপনার ঐ ব্যখ্যার কথাগুলো যদি কেউ ফেসবুকে পোষ্ট করে দেয়, তবে বড় সম্ভবনা আছে আপনি কুফরি ফতোয়া খাবেন।

আর নিজের গা বাচিয়ে পলিটিক্যলি কারেক্ট শব্দ শুধু ব্যবহার করে যদি উত্তর দেন। তবে ঐ বাচ্চা কিছু বুঝবে না, আপনি কথা লম্বা করতে থাকবেন।

তবে ঐ ছোট বাচ্চা শিখবে কি করে? তার এগুলো বুঝার দরকার নেই? কিন্তু এতদিন যে বলা হলো “এ সব ব্যপারে কেউ যদি নিজের অজ্ঞতা প্রাকাশ করে তবে সেও কাফের?”

৩৩

এক স্টেটাসের নিচে এক ভাইয়ের কমেন্ট : “আল্লাহ তায়ালা উনার জাত দিয়ে আরশের উপর আছেন, এবং উনার সিফত দিয়ে উনি সর্বত্র আছেন এটা বিশ্বাস করতে হবে।”

এর নিচে একজন আলেমের উত্তর : “জাত আর সিফতের মাঝে পার্থক্য এই দেশের কয়জন বুঝে? আর না বুঝলে সে কাফের?”

৩৪

এর কোনোটাই আমার কাছে নতুন না। এর আগে “দ্বীন অর্থ ধর্ম না”, “সালাত কায়েম বলতে নামাজ পড়া বুঝায় না” এরকম আরো অনেক “সুক্ষ্ম বিষয়” আমরা পার করে এসেছি ৮০ এর দিকে। এবং অন্ধ ভাবে সেগুলো মেনে নিয়েছি, এটা তকলিদ। কিন্তু সেই তর্কগুলো এখন আর নেই। নতুন তর্ক এর জায়গায় স্থান নিয়েছে।

৩৫

তাই এগুলো শুধু বই পড়ে জানা যায় না। আপনাকে সোশিয়াল এটমসফেয়ারের দিকে তাকাতে হবে। বর্তমানে আপনার আশে পাশের সমাজ কোন শব্দটায় অফেন্ডেড হচ্ছে। আপনার কোন কথার তারা কি অর্থ ধরছে। এবং কিসের উপর কাকে তাকফির করছে। এসব জানতে হবে।

এর পর সাবধানে পা ফেলতে হবে।

#HabibAqida