আবুল কাশেম কুশাইরী থেকে বর্ণিত;
তিনি বলেন, মরভূমির মাঝে জনৈকা নারীকে একাকী দেখলাম; বললাম, ‘কে আপনি’?
উত্তরে বললেন-“আর বলুন, সালাম,
অতঃপর শীঘ্রই জানতে পারবেন” (যুখরুখ-৮৯)
এ আয়াত থেকে পাঠ থেকে বুঝতে পারলাম যে, তিনি বলছেন, প্রথমে সালাম দিন; অতঃপর প্রশ্ন করুন; কেননা সালাম হলো ভদ্রতা এবং আগন্তুকের পক্ষ থেকে যার সান্নিধ্যে আসা হয় তার প্রতি কর্তব্যস্বরুপ; তখন আমি তাকে সালাম দিলাম এবং জিজ্ঞাসা করলাম, এই মরু প্রান্তরে একাকী আপনি কি করছেন?
উত্তরে তিনি বললেন- “আল্লাহ যাকে পথ দেখান তার কোন পথভ্রষ্টকারী নেই” (যুমার-৩৭)
এ আয়াত থেকে আমি বুঝতে পারলাম যে, তিনি পথ হারিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু পথ খুজে পাওয়ার জন্য তিনি মহান রাব্বুল আলামীনের ওপর ভরসা করছেন।
আমি তাকে প্রশ্ন করলাম আপনি জ্বিন নাকি মানুষ?
তিনি বললেন, “হে আদম সন্তানেরা! প্রত্যেক নামাযের সময় তোমাদের উত্তম পোষাক পরিধান করো”(আরাফ-৩১) এ আয়াত শুনে বুঝতে পারলাম যে, তিনি একজন মানুষ।
তখন আমি তাকে আমি জিজ্ঞাসা করলাম
‘কোথা থেকে এসেছেন?
উত্তরে তিনি বললেন,
“তোমাদেরকে দুরবর্তী স্থান থেকে ডাক দেয়া হবে” (হামীম আস সাজদা-৪৪)
এ আয়াত শুনে বুঝতে পারলাম যে, তিনি বহুদুর থেকে থেকে এসেছেন।
আবার তাকে জিজ্ঞাসা করলাম ‘কোথায় চলেছেন?’
উত্তরে তিনি বললেন, “সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর (কাবা) ঘরের হজ্জ করা ফরজ ” (আলে ইমরান-৯৭)
বুঝতে পারলাম যে, তিনি হজ্জের উদ্দেশে যাচ্ছেন।
আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, কয়দিন হলো রওয়ানা হয়েছেন।
উত্তরে বললেন, “নিশ্চয়ই আমি আকাশ সমুহ এবং পৃথিবীতে আর যা কিছু এতদুভয়ের মধ্যে বিদ্যমান সে সব কিছুকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছি ” (ক্বাফ-৩৮)
আমি বুঝতে পারলাম যে, ছয় দিন আগে তিনি হজ্জের উদ্দেশে তার স্থান থেকে রওয়ানা হয়েছেন। বললাম কিছু খেয়েছেন?
উত্তরে বললেন, “আল্লাহ কারও উপরে তার সাধ্যের বাইরে কিছু চাপান না”। (বাকারাহ-২৮৬)
বুঝতে পারলাম যে, চলার ব্যাপারে এবং দ্রুত গমনের ক্ষেত্রে আমার মত তার সাধ্যে নেই। তখন আমি তাকে বললাম, ‘আমার বাহনে আরোহণ করে বসেন। আপনাকে গন্তব্যে পৌছে দিব।’
উত্তরে বললেন, “যদি ঐ দুয়ের (আসমান ও জমিন) মধ্যে আল্লাহ ভিন্ন অন্য কোন উপাস্য থাকতো তাহলে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত” (আম্বিয়া-২২)
আমি বুঝতে পারলাম যে, একটি বাহনে পুরুষ ও নারীর শরীরের স্পর্শ ধ্বংসের কারণ হয়। কাজেই আমি বাহন থেকে নেমে পড়লাম এবং তাকে বললাম,
‘আপনি একাকী বাহনে চড়ে বসেন’।
যখন বাহনে আরোহন করলেন তখন বললেন- “পবিত্র মহান আল্লাহ যিনি একে আমাদের জন্য বশীভূত করে দিয়েছেন, অন্যথায় একে বশীভূত করার ক্ষমতা কারও ছিল না”(যুখরুখ-১৩)
যখন আমরা একটি কাফেলার সাথে একত্রিত হলাম তখন তাকে জিজ্ঞাসা করলাম ‘এই কাফেলায় কি কেউ আপনার পরিচিত রয়েছে?’
উত্তর দিলেন “মুহাম্মাদ একজন প্রেরিত পুরুষ বৈ অন্য কেউ নন”(আল-ইম রান- ১৪৪)
“হে ইয়াহিয়া! কিতাবকে শক্তভাবে ধারণ করো”(মারিয়াম-১২)
“হে মুসা! নিশ্চয়ই আমিই আল্লাহ” (কাসাস-৩০)
“হে দাঊদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি নির্ধারণ করেছি” (সাদ-২৬)
এ আয়াত সমুহ থেকে বুঝতে পারলাম যে, মুহাম্মাদ, ইয়াহিয়া, মুসা ও দাঊদ নামে তার চারজন পরিচিত লোক কাফেলায় রয়েছে।
যখন ঐ চারজন নিকটে এলেন তখন তিনি এ আয়াত পাঠ করলেন- “মাল- সম্পদ এবং সন্তান-সন্ততি হল পার্থিব জগতের সৌন্দর্য্য” (কাহফ-৪৬)
আমি বুঝতে পার লাম যে, এরা তার পুত্র।
তিনি তাদেরকে বললেন “হে বাবা! তাকে মজদুর নিযুক্ত করো, কারণ তোমার মজদুর হিসেবে উত্তম হবে সেই ব্যক্তি যে শক্তিশালী এবং বিশ্বস্ত”(কাসাস-২৬)
এ আয়াত থেকে আমি বুঝতে পারলাম যে, তিনি তার পুত্রদেরকে বলছেন এই পরিশ্রমী ও বিশ্বস্ত লোককে পারিশ্রমিক প্রদান করো। যখন তার পুত্ররা আমাকে কিছু অর্থ প্রদান করলো তখন তিনি অনুভব করলেন যে এগুলো কম হয়ে গেছে।
একারনে তিনি বললেন “আল্লাহ যাকে চান তাকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেন” (বাকারাহ-২৬১) অর্থাৎ তার পারিশ্রমিক আরো বেশি দাও।
এবার আমার কৌতুহলকে সন্তুষ্ট করার অভিপ্রায়ে তার পুত্রদেরকে জিজ্ঞেস করলাম “এ পূণ্যবতী নারী কে যিনি কুরআন ছাড়া কথা বলেন না"
তারা বললেন, এ নারীর নাম হযরত ফিজ্জাহ। রাসুলের কন্যা হযরত ফাতিমা(রা) –এর দাসী।
বিশ বছর ধরে তিনি কুরআন ছাড়া কথা বলেন না ।
আল্লাহ তার সহায় হোন। আমীন।