(কোরআন শরিফ শেখার উপর যে টিপসগুলো পোষ্ট করেছি তার সবগুলো একসাথে)

 
Written By Sanjir Habib On Aug-14th, 2017

(কোরআন শরিফ শেখার উপর যে টিপসগুলো পোষ্ট করেছি তার সবগুলো একসাথে)

বাচ্চাদের শেখা vs বড়দের শেখা।

কিছু পার্থক্য আছে। বাচ্চারা brute force শিখে ফেলতে পারে। বড়রা concept টা শেখে।

ছোটবেলা যখন বাপুরাম সাপুড়ে শিখেছিলাম, তখন এর এক বর্ন অর্থ বুঝতাম না। তার পরও মুখস্ত ছিলো। ক্লাস ৪-৫ এ উঠে বুঝেছি ও অর্থ এই ছিলো? একটা সাপ নিয়ে?

১০ বছরের বাচ্চা যে মাদ্রসায় হিফজ করে সে আরবী কিছু বুঝে না। তার পরও সে সব মুখস্ত করে ফেলতে পারবে। কিন্তু আপনি বা আমি এভাবে পারবো না।

এজন্য প্রথমে আরবী ভাষাটা শিখতে হবে। word forms, sentence formation rules এগুলো জানা প্রয়োজন।

একবার এগুলো জেনে ফেললে, দেখবেন শেখাটা অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। কথা, বর্ননা বা কাহিনি মনে রাখার মত।

আরবদের হিফজ করা অনেক সহজ, কারন আরবী ভাষাটা তাদের জানা আছে। আমাদের বাচ্চাদের একটু বেশি সময় লাগে। আরবদের বাচ্চারা সাধারন ভাবে ৯ মাসে হিফজ করে। তাদের বয়স্কদেরও ২ বছরের বেশি লাগে না।


একটা পৃষ্ঠা শেখার জন্য স্টেপগুলো, আবার।

১। অনুবাদ থেকে প্রতিটা আয়াতের অর্থ দেখে নেয়া, নতুন শব্দগুলো শিখা।
২। এর পর তিলওয়াত প্লে করে অনেক বার শুনা, অর্থ ধরে।
৩। পৃষ্ঠাটা তিন ভাগে ভাগ করে, উপরের অংশ খুব ধীরে একটা একটা করে শব্দ পড়ে যাওয়া। মনে রেখে।
৪। উপরের অংশ হয়ে যাবার পর মাঝের অংশ একই ভাবে, ধীরে।
৫। শেষ অংশ।
৬। রিভিউ, অডিওর সাথে আবার মিলানো।

প্রতিটা স্টেপে ২০ মিনিট করে দিলে ২ ঘন্টা লাগবে।


“ভাই আমি তিলওয়াতটা অনেকবার করে শুনেছি। এর পর কি করবো? উনার মত তিলওয়াতের চেষ্টা করবো?”

উত্তর, না।
বরং এর পর এইভাবে করবেন,

প্রথমে মুসহাফ/কোরআন শরিফ নিয়ে বসেন।
দেখে দেখে প্রথম শব্দটা স্পষ্ট করে কয়েকবার পড়েন, ধীরে।
ওটা শিখা হয়ে গেলে, এর পরের শব্দটাও ধীরে আলাদা করে শিখেন।

পরের বা আগের শব্দের (word) সাথে মিলাবেন না। প্রতিটা শব্দ আলাদা।
মিমবা'দি না। বরং “মিন” এর পর “বা'দি"।

সুর করে পড়বেন না, কিন্তু টান উচ্চারন ঠিক রাখতে হবে।

আয়াতের সবগুলো শব্দ একটা একটা করে শিখা হয়ে গেলে এর পর চেক করেন না দেখে প্রতিটা শব্দ আলাদা আলাদা করে উচ্চারন করে পড়তে পারেন কিনা।
ধীরে ধীরে।
পারলে, এর পর আস্তে আস্তে একটা শব্দের সাথে অন্যটা মিলিয়ে ধীরে তিলওয়াতের মত পড়েন।

এর পর আরো প্রেকটিশ করতে থাকলে আস্তে আস্তে স্পিড উঠবে।
তবে দ্রুত পড়ার মাঝে এক্সপার্টনেস বুঝায় না।
এক্সপার্ট হলো যে ধীরে তিলওয়াত করতে পারে।

এর পর একসময় দেখবেন এই তিলওয়াতকারীর মত পড়তে পারছেন, ইনশাল্লাহ।


“সপ্তাহে দুই পৃষ্ঠা?”

এটা শর্ত না। একটা নিয়ম। অন্য কারো জন্য কঠিন মনে হলে দুই সপ্তাহে এক পৃষ্ঠা শিখলেও চলবে। এভাবেও বছরে এক পারা শেষ করতে পারবেন ইনশাল্লাহ।

শর্ত হলো রেগুলার একটা সময় দেয়া। কিছু দিন পরে যেন বন্ধ না হয়ে যায়। সময়টা কমিয়ে ধরা ভালো যেন ব্যস্ততার কারনে আর না কমে।

এভাবে দুই পৃষ্ঠা শিখতে কত দিন লাগে সেটা ট্রাই করে দেখে নিতে হবে। বের করলেন সপ্তাহে ১ পৃষ্ঠা।

এর পর সপ্তাহে ১ পৃষ্ঠাকে টার্গেট করে নিতে হবে। দৈনিক সময় কম-বেশি হবে টার্গেটের জন্য।

শেখার সময়,

“একটা আয়াত বেশ কঠিন, সময় লাগছে, লম্বা। এর পরেরগুলো সহজ।”

এক্ষেত্রেও কঠিনটা ভালোমত শিক্ষা না করে পরের আয়াত শিখতে যাবো না। যদিও অনেক সময় লাগবে, এখানে আটকে থাকবো, সারা দিন লাগবে। এর পরও।

নিজের ভয়ের মুখোমুখি হতে হবে। তাহলে ভয় কেটে যাবে। কিন্তু এড়িয়ে গেলে সবসময় এড়িয়ে যাবার একটা ট্রেন্ড থাকবে। কাজ অগোছালো হবে।

ঠিক তেমন এক পৃষ্ঠা ভালো মত শেষ না হলে পরের পৃষ্ঠায় যাবো না। “পৃষ্ঠার শেষ দুই আয়াত একটু কঠিন পরে শিখবো” – এরকম যেন না হয়।

কঠিনগুলোর পেছনে সময় দিতে হবে, অনেক সময়।
এবং এটা সহজগুলোতে যাবার আগেই।

quran.com সাইটেও প্রতিটা আয়াত আলাদা করে লুপ খেয়ে খেয়ে শুনতে পারবেন। বার বার।


শেডিউল:
৩ দিনে এক পৃষ্ঠা করে ৬ পৃষ্ঠা। এর পর ৩ দিন রেষ্ট।

পদ্ধতি:
এখন ইনডেক্সে জোর দিচ্ছি।
এর জন্য সময় বের করতে, শুনা কমিয়ে দিয়েছি।

ইনডেক্স মানে প্রতি পৃষ্ঠার প্রথম আয়াত যেন সিরিয়ালি বলতে পারি।
এবং পৃষ্ঠার সবগুলো আয়াতের প্রথম শব্দ যেন সিরিয়ালি বলতে পারি।

Steps:
১। প্রথমে আরবী অর্থটা মিলানো। নতুন শব্দগুলো শিখে নেয়া।
২। প্রথম দুই-তিনটা শব্দ দিয়ে আগের পৃষ্ঠাগুলোর সাথে সিরিয়াল মিলিয়ে নেয়া।
৩। পৃষ্ঠার প্রতিটা আয়াতের প্রথম দুটো শব্দ শিখে নেয়া।
৪। এর পর পৃষ্ঠাটা তিন ভাগ করে তিন দিনে শিখে নেয়া। ধীরে একটা একটা করে শব্দ। সূর ছাড়া, তবে টান ঠিক রেখে স্পষ্ট উচ্চারনে।
৫। শেখা হয়ে গেলে এর পর রেকর্ড থেকে বার বার শুনা, সুর করে মনে গেথে রাখা।
৬। ছয় পৃষ্ঠা হয়ে গেলে ব্রেক এবং হাফেজকে শুনানো।

সময়,
ফজরের সময়ে আধা ঘন্টা।
রাতে বিছানায় শুয়ে রিভিউ।


৬ পৃষ্ঠা হয়ে গেলে এক সপ্তাহের একটা ব্রেক দেয়া ভালো।
এ সময়ে শুধু আগেরগুলো রিভিশন।
একেবারে ভালো মত শেখা হয়ে গেলে পরবর্তি ৬ পৃষ্ঠা হবে আরেকটা নতুন ব্লক।
পরের ছয় পৃষ্ঠা শেখার সময়ে যেন আগের ৬ পৃষ্ঠা নিয়ে চিন্তিত না হতে হয়।

কোনো পৃষ্ঠায় বেশি সময় লাগে, কোনোটায় কম। স্বাভাবিক। যেমন এক পৃষ্ঠা শিখতে ৫ দিন লাগলো, পরেরটা ২ দিন।


ছয় পৃষ্ঠা হয়ে গেলে একজন হাফেজকে শুনাতে হবে। হুড়মুড় করে না শুনিয়ে, দৈনিক ১ পৃষ্ঠা করে শুনানো ভালো। আজকে যেটা শুনালাম সেটার ভুলগুলো মার্ক করে রেখে পরদিন সেটা শুদ্ধ করে আবার শুনাতে হবে। এর সাথে নতুন আরেক পৃষ্ঠা। সেটার ভুলগুলো আবার মার্ক করে রাখতে হবে।

এভাবে ছয় পৃষ্ঠা শুনানোর শেষ হলে, একদিনে সম্পুর্ন ছয় পৃষ্ঠা শুনাতে হবে।


ইন্ডেক্সিংটা জরুরী। যেন উল্টো পাল্টা না হয়ে যায়। এর জন্য এখন যা করছি।


সময় একদম কমিয়ে দিয়ে, কতটুকু স্টেডিলি শেখা যায় সেটা দেখার বিষয়। কারন কোনো সপ্তাহে সময় খুব বেশি দিয়ে এর পরে যেন উৎসাহ কমে না যায়।

আল্লাহ তায়ালা সহজ করুন।


এক সময় মনে হয় – এবার বোধ হয় হলো না। সেই দিন সময় কিছু বাড়িয়ে পড়লে আল্লাহর রহমতে সেটা কভার হয়ে যায়।

হাল ছাড়া যাবে না।


কখনো মনে হয় – শেষ কয়েকটা আয়াত crude method এ মুখস্ত করে ফেলি। বাচ্চারা যেমন করে।

কিন্তু এটা trap. সময় নষ্ট হবে, শিখতে পারবো না।

অর্থ বুঝে, ধীরে একটা একটা শব্দ পড়ে শিখতে হবে। সময় নিয়ে। যত rush থাকুক না কেন। এভাবে করলে মনে থাকবে। দ্রুত পড়ে মুখস্ত করতে গেলে বরং বেশি সময় লাগবে।


বড় কোনো পাপ, ঝগড়া ঝাটি এসব করলে অন্তরে সব উলট পালট হয়ে যাবে। তাই এই কয় দিন ডিশ টিভি যা আছে সব বন্ধ করে তুলে রাখতে হবে। যার আছে।


যারা শিখছেন তাদের জন্য রিভিউ এর নিয়ম।

রিভিউ না করলে অনেক দিন পরে ভুলে যাবো।

সর্বশেষ ৬ পেইজ যেটা শিখেছি, প্রতিদিন রিভিউ করতে হবে।

বেষ্ট হলো নামাজে পড়া। যেমন জোহরের ৬ রাকাত সুন্নাহ নামাজে সর্বশেষ শেখা ৬ পৃষ্ঠা পড়ে নিলাম। আমাদের যেহেতু ৬ পৃষ্ঠা এখনো হয় নি। তাই শেষ তিন পৃষ্ঠা রিভিউ করবো। বা যে কয় পেইজ ভালো মত হয়েছে।

কোনো কারনে সেটা মিস হলে ইশার নামাজের পরে দুই রাকাত সুন্নাহ নামাজে পড়ে নেয়া যায়।

সেটা না হলে, ঘুমানোর সময়ে বিছানায় পড়ে নেয়া।

দিনে একবার পড়লে হয়। কনফার্ম করে নিলাম এখনো মনে আছে। কোথাও সন্দেহ চলে আসলে দেখে আবার ঠিক করে নিতে হবে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য সহজ করুন।


যদি দেখেন পিছিয়ে পড়ছেন সময় বাড়াতে হবে। রাতে আরো ২০ মিনিট দিলেন।

এতেও না হলে take it slow. সপ্তাহে ১ পৃষ্ঠা করে শিখেন। রেগুলার থাকা শর্ত।

কিছু শেখা হলে একজন হাফেজের কাছে শুনাতে হবে। ভুল থাকলে ধরে দেবেন। দাগিয়ে ঠিক করতে হবে।


“হাফেজ কোথায় পাবো?”

আপনার বাচ্চাকে যে হাফেজ পড়ান তার কাছে। উনি হাফেজ না হলে বদলিয়ে হাফেজ রাখুন।

বিদেশে থাকলে পেইড হাফেজ আছে যারা ভিডিও চ্যটে শিখাবে। আরব। নেটে খোজ লাগান।

যারা শিখছেন তাদের জন্য পোষ্ট। ৫ জন হবে।

আমরা ২ ঘন্টায় ১ পৃষ্ঠা শিখছি।

যে সব কারনে আপনার একটু বেশি সময় লাগতে পারে।
১। তিলওয়াতে এখনো দক্ষ না: সে ক্ষেত্রে তিলওয়াত ঠিক করে নিতে হবে।
২। বেসিক আরবী এখনো শেখা হয় নি: শিখে নিতে হবে।
৩। এখনো ৫ পারার কম মুখস্ত আছে: ৫ পারার পর সহজ হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।

যেগুলো আপনার বেশি সময় লাগার কারন হতে পারে না।
১। বয়স বেশি: আমি আরো বড়। :-)
২। স্মরন শক্তি কম: আমার আরো কম। নিজের মোবাইল নম্বর মনে থাকে না।
৩। ব্যস্ততা: ব্যস্ততার মাঝে মানুষ যা করে সেটা সম্পূর্ন হয়। অবসরের কাজ সম্পূর্ন হয় না।


কোরআন শরিফ শেখার সময় আমি তফসির দেখি না। আরবী পড়ে যা বুঝি সেটা নিয়ে এগিয়ে যাই। পরবর্তিতে কেউ যদি এমন ব্যখ্যা নিয়ে আসে যেটা আমি যা বুঝেছি তার উল্টো, তখন তফসির পড়ে দেখি কোনটা ঠিক।

আবার মাঝে মাঝে কোনো আয়াতের একদম অর্থ বুঝতে পারি না। তখন তফসিরে দেখি এটার অর্থ কি।


“শেখার জন্য কতটুকু সময় দিতে হবে?”

দিনকে চার ভাগে ভাগ করে। এর পর যে কোনো এক ভাগে ২০ মিনিট সময় দিতে হবে। বাকি তিন ভাগে প্রতিটায় ৫ মিনিট করে। না হলে রাতে ঘুমানোর আগে বিছানায় শুয়ে।

২০ মিনিট সময়টা যেমন ফজরের সময়ে দিলেন। বরকতের, অনেক মনে থাকে। নতুন আয়াতগুলো শিখলেন। এটা মুসহাফ, মানে কোরআন দেখে শিখতে হবে।

বাকি ৫ মিনিটগুলোতে মনে মনে রিভিউ। অজু না থাকলেও হয়। গাড়িতে, জ্যমে বা ওয়েট করছেন কিছু জন্য তখন। আওড়িয়ে দেখতে হবে কতটুকু মনে আছে। ভুলে গেলে মোবাইলে বা কম্পিউটারে দেখে নিতে হবে। মসজিদে জামাতের আগে পরে যে সময়টা আমরা অপেক্ষা করি, এর জন্য বেষ্ট।

মোবাইলের স্ক্রিনে কোরআন শরিফের আয়াত থাকলে, আয়াতগুলো স্পর্শ করা যাবে না অজু ছাড়া। লিখার সাইড দিয়ে টাচ করতে পারবেন।