খারিজী কথনঃ ইসলামের ইতিহাসে যুগে যুগে একটা দল ছিল যারা তাকফির করনে সিদ্ধহস্ত

 
Written By Sanjir Habib On May-16th, 2015

খারিজী কথনঃ
ইসলামের ইতিহাসে যুগে যুগে একটা দল ছিল যারা তাকফির করনে সিদ্ধহস্ত ছিল। তারা কবিরা গুনাহের কারনেই মুসলিমকে কাফির গণ্য করত। এমনকি ইজতিহাদী মতপার্থক্যের কারনেও অন্যদের কাফির ঘোষণা করত। শুধু তাই নয় এই দলটি নিজেদের ব্যতিত অন্য সবাইকেই কাফির মনে করে। এবং তাদেরকে হত্যার তাগিদ দেয়। এই গ্রুপটির উত্থান হয়েছিল ৬৫৬ সালে উসমান (রাঃ) কে হত্যার মাধ্যমে। জ্বী, আমি খারিজীদের ফিতনা সম্পর্কেই বলছি। এদের সম্পর্কেই আল্লাহর রাসূল (সঃ) বলেছিলেন,
“তোমাদের মাঝে এমন এক সম্প্রদায় আসবে যাদের নামাযের কাছে তোমাদের নামায নগণ্য মনে হবে, যাদের সিয়াম, কিরাত, নেক কর্মের কাছে তোমাদের সিয়াম, কিরাত, নেক কর্ম নগণ্য মনে হবে। কিন্তু তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে যেমনিভাবে তীর শিকারের দেহ থেকে বের হয়ে যায়।”
(বুখারী)
হাদীস থেকে আরো জানা যায় যে খারিজীদের এই ফিতনা যুগে যুগে আসবে।
“এ উম্মাতের মধ্যে এমন একটি সম্প্রদায় আগমন করবে যারা বয়সে তরুন এবং তাদের বুদ্ধিজ্ঞান অপরিপক্কতা ও প্রগভতায় পূর্ণ। মানুষ যত কথা বলে তন্মধ্যে সর্বোত্তম কথা তারা বলবে। কিন্তু তারা সত্য, ন্যায় ও দ্বীন থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে যেমনিভাবে তীর শিকারের দেহ থেকে বের হয়ে যায়।”
(বুখারী)
এ হাদীস থেকে অতিরিক্ত যে বিষয়টা পাওয়া যায় তা হলো, ‘তারা হবে বয়সে অপেক্ষাকৃত তরুণ এবং তাদের জ্ঞান হবে অপরিপক্ক।’
এদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ইবনে উমার (রাঃ) বলেনঃ
“কাফিরদের বিষয়ে যে সকল আয়াত নাযিল হয়েছে সেগুলো নিয়ে তারা মুসলিমদের উপর প্রয়োগ করে।”
(বুখারী)
অর্থাৎ মুসলিমদেরকে হত্যা করা, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা জায়েয মনে করে।
তারা মনে করে যেহেতু তারা ব্যতিত অন্যরা কাফির কাজেই অন্যদেরকে গুপ্তহত্যা করলেই উম্মাহ পাপ পঙ্কিলতা থেকে উদ্ধার পাবে।
আব্দুর রহমান ইবনু মুলজিম এ ধারণার কারনেই ৪০ হিজরীর ২১ রমযানে আলী (রাঃ) যখন ফজরের সালাতের জন্য বাড়ি থেকে বের হন, তখন তাঁকে বিষাক্ত তরবারী দ্বারা হত্যা করে। আলী (রাঃ) শাহাদাতের পর উত্তেজিত সৈন্যরা যখন ঐ লোকের হাত পা কেটে দেয় তখন সে কষ্ট প্রকাশ করে না, বরং আনন্দ প্রকাশ করে। কিন্তু যখন তার জিহ্বা কর্তন করতে চায় তখন সে আপত্তি ও বেদনা প্রকাশ করে। এর কারন জানতে চাইলে সে বলে, “আমি চাই যে আমি আল্লাহর রাস্তায় যিকির করতে করতে শহীদ হবো"।
এ গুপ্তঘাতকের প্রশংসা করে তাদের এক কবি ইমরান ইবনু হিত্তান বলেনঃ
"কত মহান ছিলেন সে নেককার মুত্তাকি মানুষটি, যিনি সে মহান আঘাতটি করেছিলেন! সে আঘাতটির দ্বারা তিনি আরশের অধিপতির সন্তুষ্টি ছাড়া কিছুই চান নি। আমি প্রায়ই তাঁর কথা স্মরণ করি এবং মনে করি আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি সওয়াবের অধিকারী তিনিই।”
(মুবাররিদ, আল কামিল)
এই ঘটনা থেকে ইসলামের প্রতি তাদের প্রবল অনুরাগ অথচ ভ্রান্তমুখী আক্বীদা ও কর্মপদ্ধতির পরিচয় সুস্পষ্ট।