আবু নাসের নামে এক জেলে ছিলো। স্ত্রী আর সন্তান নিয়ে খুব গরীবী জীবন যাপন করতো।
এক দিন রাস্তা দিয়ে হাটছে। চিন্তিত ব্যথিত। স্ত্রী সন্তান ক্ষুধায় কান্না করছে।
সে যুগের মুসলিমদের আলেম “আহমেদ বিন মিসকিন” এর সাথে পথে দেখা।
শায়েখকে সে বলে,
: আমি ক্লান্ত
শায়েখ বলেন,
: আমার সাথে সমূদ্রে আস।
তাকে নিয়ে সমূদ্রে যায়। বলে
: দুই রাকাত নামাজ পড়।
নামাজ পড়ে।
বলে
: বিসমিল্লাহ বলো।
বিসমিল্লাহ বলে। জাল ছুড়ে মারে। বিশাল একটা মাছ ধরা পড়ে।
শায়েখ বলেন,
: এটা বিক্রি করে তোমার পরিবারের জন্য খাবার কিনো।
বাজারে যায়। বিক্রি করে। দুটো বড় রুটি কিনে।
প্রথম রুটিটা গোস্ত দিয়ে, দ্বিতীয়টা হালুয়া দিয়ে।
শায়েখকে এর থেকে কিছু খাওতে চায়। শায়েখের কাছে যায়। একটা রুটি দেয়।
শায়েখ বলে,
: যদি আমরা নিজেরা নিজেদের খাওয়াই, তবে মাছটা ধরেছিলাম কেন?
বুঝলো শায়েখ সোয়াবের আশায় ভালো কাজ করছেন। এর জন্য মূল্য নিতে চাচ্ছেন না।
শায়েখ রুটিটা ফিরিয়ে দেয়।
বলেন,
: এটা নিয়ে যাও। এটা তোমার।
ফেরার পথে রাস্তায় দেখে এক মহিলা। তার সন্তান নিয়ে ক্ষুধায় কান্না করছে।
তার হাতের দুটো রুটি।
এর দিকে তাকিয়ে চিন্তা করে – এই মহিলা আর তার সন্তানের অবস্থা আমার স্ত্রী আর সন্তানের মত।
দুজনই ক্ষুধায় কান্না করছে। আমি কি করবো?
মহিলার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে, চোখে কোনো পানি নেই।
বললো,
: এই দুই রুটি তোমার।
মহিলার চেহারা আন্দিত হয়ে গেলো। তার সন্তান হাসতে থাকলো।
দুঃখ নিয়ে ঘরে ফিরতে থাকে। স্ত্রী সন্তানকে খাওয়া দেবে কিভাবে?
দুঃখভরাক্রান্ত অবস্থায় হাটার সময়ে শুনতে পায় এক লোকের ডাক,
: আবু নাসের জেলেকে কে চিনে?
লোকেরা তাকে দেখিয়ে দেয়। সে বলে,
: তোমার পিতা আমাকে ২০ বছরের জন্য টাকা ধার দিয়েছিলো। এর মাঝে মারা যান। ফিরত দেবার সময় হয়েছে। ছেলে! তুমি তোমার পিতার তিন হাজার দিরহাম নাও।
আবু নসর জেলে বলেন,
: এর পর আমি মানুষের মাঝে সবচেয়ে ধনী হয়ে গেলাম। নিজের ঘর তৈরি করি, ব্যবসা আরম্ভ করি, মাঝে মাঝে হাজার দিরহাম পর্যন্ত একদিনে দান করে দেই।
এজন্য শুধু আল্লাহ তায়ালারই শোকর।
দিনের পর দিন যায়। আমি ছিলাম মানুষের মাঝে সবচেয়ে বড় দানশীল।
মাঝে মাজে নিজেই অবাক হয়ে যেতাম।
এর পর।
এক রাতে আমি স্বপ্ন দেখি মিজান কায়েম হয়েছে।
একজন ডেকে বলছে,
: আবু নাসের জেলে চলে আসো! তোমার নেকি বদি ওজন করা হবে।
আমার নেকি তোলা হয়। বদি তোলা হয়।
আমার খারাপের ওজন বেশি!
আমি বলি,
: যে মালগুলো আমি দান করতাম, সেগুলো কোথায়?
সেগুলো আনা হয়। পাল্লায় তোলা হয়।
হাজার হাজার দিরহাম যা দান করেতাম সব উড়ে যায়। দানের উপর আমার আত্মতুষ্টি আর আমার কামনার বিপরিতে।
এগুলো যেন তুলার মত, কোনো ওজনই নেই।
আমার বদীর ওজন বেশি!
কান্না করতে থাকি।
আমার নাজাত কিসে?
শুনতে পাই সেই ডাকনেওয়ালা বলে,
: এই লোকের আর কিছু বাকি আছে?
শুনতে পাই মালিক বলছেন,
: হ্যা তার দুটো রুটি বাকি আছে।
যেগুলো সে ঐ মহিলাকে দান করেছিলো।
এর পর রুটি দুটো নেকির পাল্লায় রাখা হয়।
নেকির পাল্লা নিচের দিকে নামা আরম্ভ করে।
যতক্ষন না এটা বদির পাল্লার সমান হয়ে যায়। তার পর থেমে যায়।
ডাকনেওয়ালা বলে,
: তার আর কিছু বাকি আছে?
মালিক বলেন,
: তার আরো বাকি আছে।
: কি সেটা?
: ঐ মহিলার চোখের পানি। যে মহিলাকে সে রুটি দুটো দিয়েছিলো।
মহিলার চোখের পানি আনে। পাল্লায় রাখে। নেকির পাল্লা ভারি হয়ে যায়। আমি আনন্দিত হই।
ডাকনেওয়ালা আবার বলে,
: আর কিছু বাকি আছে?
: হ্যা আছে। সেই ছেলের মুখের হাসি যাকে রুটি দেয়া হয়েছিলো।
এর পর পাল্লা ভারি হতে থাকে, ভারি হতে থাকে, ভারি হতে থাকে।
আমি শুনতে পাই, ডাকনেওয়ালা বলছে,
: তুমি নাজাত পেয়েছো, তুমি নাজাত পেয়েছো!
আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়, এর পর আমার মনে পড়লো আহমেদ বিন মিসকিনের সেই কথা যখন রুটিটা ফিরিয়ে দিচ্ছিলেন,
: যদি আমরা নিজেরা নিজেদের খাওয়াই, তবে মাছটা ধরেছিলাম কেন?
নেটে খুজে দেখলাম “আহমেদ বিন মিসকিন” ছিলেন একজন তাবেয়ি।
[ যেখান থেকে অনুবাদ করা হয়েছে ]
https://www.facebook.com/qsas.3br/photos/a.295126890635007.1073741828.295125357301827/774158742731817/?type=3&theater
#HabibTranslation