"কতটুকু শুদ্ধ করে পড়া শিখতে হবে কোরআন মুখস্ত শুরু করার আগে?"

 
Written By Sanjir Habib On Jan-31st, 2017

“কতটুকু শুদ্ধ করে পড়া শিখতে হবে কোরআন মুখস্ত শুরু করার আগে?”


কয়েক বছর আগে নেটে এক আরব ছেলে বলছিলো: আমার পিতা অন্ধ হাফেজ। আমরা তিন চার ভাই বোনদের উনি নিজে ছোটকালে হাফেজি পড়াতেন। কোরআন শরিফ দেখে পড়তে দিতেন না। উনি মুখে মুখেই শিখাতেন। এই ভাবে আমরা অনেক পারা মুখস্ত করি। পরে যখন আব্বাকে রাজি করিয়ে আমরা দেখে দেখে পড়া আরম্ভ করলাম তখন আমাদের জন্য আরো সহজ এবং মুখস্ত তাড়াতাড়ি হওয়া আরম্ভ করলো।


এই দেশে। এক ছেলেকে হাফেজি পড়ানোর জন্য তার পিতা মাদ্রাসায় দিয়েছে। উনার পিতা বললেন, “সে এখন পড়া শিখছে। পড়া শিখা হয়ে গেলে হাফেজি আরম্ভ করবে ইনশাল্লাহ।”

পরের বছর জিজ্ঞাসা করলাম, “আরম্ভ করেছে?”

“না। তাকে অন্য মাদ্রাসায় দিয়েছি। নতুন মাদ্রাসায় বলছে এত দিন যা পড়া শিখেছে কিছু হয় নি। নতুন করে আবার আলিফ-বা-তা মুখস্ত করাচ্ছে।”


অন্য এক ছেলে। মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে কয়েক বছরে ৮-১০ পারা মুখস্ত করে ফেলেছে। এর পর অন্য মাদ্রাসায় দেয়া হলো। খবর পেলাম ঐ মাদ্রাসার শিক্ষক বলেছে, “যা মুখস্ত করার মুখস্ত করেছে, কিন্তু তার পড়া আসলে শুদ্ধ না।” এখন আবার নতুন করে তাকে পড়া শিখাচ্ছে। এর পর হাফেজি।


রাসুলুল্লাহ ﷺ এর হাদিস:
“তোমরা তিলওয়াত করতে থাক। শীঘ্রই এমন একটা কাল আসবে যখন মানুষ কুরআনকে তীরের মত সোজা করবে (অর্থাৎ অক্ষরগুলো আদায়ে যারপরনাই গুরুত্ব দেবে)। অথচ কুরআন তিলওয়াত দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য হবে দুনিয়া হাসিল করা। তারা কুরআন তিলওয়াত দ্বারা নিজেদের আখিরাত সাজাবার কথা ভাববে না”


তিলওয়াত যদি অশুদ্ধ হয় তবে মুখস্ত এগোবে না। ভুলে যাবেন।
শুদ্ধ তিলওয়াতে মুখস্ত হবে দ্রুত, এবং ইনশাল্লাহ স্বরন থাকবে।


আমাদের এলাকার এক যুবক। কুমিল্লার এক মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে কোরআন শিখার জন্য। চার বছরের কোর্স। চার বছর পরে জিজ্ঞাসা করলাম, “হাফেজি শেষ?"।
বললো, "না। এই চার বছর শুধু পড়া শিখেছি। মাদ্রাসায় রাতে থেকে। সারা দিন।”

বিশ্বাস করলাম না। ধারনা করলাম এখলাসের জন্য গোপন করছে। তাই অন্য একজনকে দিয়ে খবর নিলাম। না সত্যি। হাফেজির জন্য সে ভর্তি হয় নি। পড়া শিখার জন্য ভর্তি হয়েছিলো।

আল্লাহ তায়ালা তাদের পরিশ্রমকে কবুল করুন।


মুখস্ত সঠিক হচ্ছে কিনা এটা বুঝার জন্য নেটে আরব আলেমদের তিলওয়াতের সাথে মিলিয়ে নিতে হবে অনেক। মাঝে মাঝে কোনো হাফেজকে শুনাতে হবে।


“কিন্তু হাফেজ পাবো কোথায়?”

চাকরি জীবি হলে বাচ্চা পড়ানোর জন্য যে হাফেজ আছে তাদের কাউকে বলবেন আমাকে পড়াবেন সপ্তাহে এক দিন আসবেন ১ ঘন্টা এত টাকা দিবো। কত টাকা? মাসে ৫০০/= দিলেই হবে। এর পর উনার কাছে পড়া শিখতে থাকবেন, মুখস্তও করেও শুনাতে থাকবেন।


“আমি ছাত্র। মাসে ৫০০ টাকা খরচ করার সামর্থ আমার নেই।”

এই কেইস ছিলো আমার। আমি যতটুকু শুদ্ধ আছে ততটুকু শুদ্ধ মেনে নিয়েই মুখস্ত করে গিয়েছি। এর পর সময়ের সাথে সাথে যখন সুযোগ হয় তখন হাফেজদের কাছে গিয়ে, ঐ সুরাগুলো ঠিক করে যাচ্ছি, আলহামদুলিল্লাহ।

শুদ্ধ হতে সময় লাগে। এবং “একদম পারফেক্ট” অনেকের কখনোই হয় না।

কিন্তু এর আগে যতটুকু আপনার মুখস্ত আছে ততটুকুর উপকার আপনি পেতে থাকবেন, ইনশাল্লাহ।

পরের পর্ব
মুখস্ত করায় আপনি এত জোর দিচ্ছেন কেন? অর্থ বুঝে শিক্ষা করাটা বরং বেশি জরুরী
https://www.facebook.com/habib.dhaka/posts/10154280834478176

#MemorizeQuran