এক যুবকের মৃত্যু:
এক ডাক্তার বলছেন: হাসপাতাল থেকে ফোন আসলো এম্বুলেন্সে এক রোগি আছে, অবস্থা খুব খারাপ।
যখন পৌছলো দেখলাম এক যুবক। মারা গিয়েছে, আল্লাহ তায়ালা তার উপর রহম করুন।
কিন্তু তার মৃত্যুর বিশেষত্ব কি? প্রতিদিনই তো হাজার লোক মারা যাচ্ছে? তাদের মৃত্যু কেমন? আর তাদের জীবনের পরিসমপ্তি কেমন?
একজনের ভুল করে ছোড়া গুলি এই ছেলের গায়ে লেগেছে। তার পর তার বাপ-মা দ্রুত তাকে রিয়াদ সামরিক হাসপাতালে নিয়ে আসেন। আল্লাহ উনাদের দুজনকে উত্তম প্রতিদান দিন।
এম্বুলেন্স যাখন রাস্তায় তখন ছেলেটা তার বাপ-মার দিকে ঘুরে ফিরে তাদের সাথে কথা বলে। কি বলে? চিৎকার করছিলো? হা হুতাশা করছিলো? বলছিলো আমাকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে চলো? নাকি সে রাগ আর অভিযোগ করছিলো?
ছেলেটা তার বাপ মা কে বলছিলো: “ভয় পেয়ো না। আমি মারা যাবো। তবে নিশ্চিন্তে থাকো। আমি জান্নাতের সুগন্ধ পাচ্ছি!”
আর এটা সে প্রালাপের মত বলছিলো না। বরং বিশ্বাসের সাথে একই কথা এম্বুলেন্সের ডাক্তারদেরকেও বললো। ডাক্তাররা তখন তার জীবন বাচানোর চেষ্টা করে যাচ্ছিলো।
সে বললো: “আখি আমি মারা যাচ্ছি, তোমরা নিজেদের কস্ট দিও না। আমি জান্নাতের গন্ধ পাচ্ছি।”
এর পর সে তার বাপ-মাকে কাছে ডেকে জড়িয়ে ধরলো। তাদের কাছে মাফ চাইলো। তার ভাইদের সালাম পাঠালো। এর পর শাহাদাহ পাঠ করলো, “আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রাসুলুল্লাহ।”
এর পর তার রুহ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে চলে যায়।
আল্লাহু আকবার।
কি বলবো? কি মন্তব্য করবো? আমার কথা গলায় আটকিয়ে যাচ্ছে। হাতের কলম কাপছে। শুধু মনে পড়লো আল্লাহ তায়ালা কথা “আল্লাহ মুমিনদেরকে মজবুত কথা দিয়ে মজবুত করেন। দুনিয়ার এই জীবনে এবং আখিরাতেও।” এর উপর আর কথা নেই। (সুরা ইব্রাহীম আয়াত ২৭)
এর পর উনি বলে যাচ্ছেন। এর পর তাকে গোসল দিতে হবে। আমাদের জিয়া ভাই উনাকে হাসপাতালের মৃতদের গোসলের জায়গায় নিয়ে যায়। এবং সে সেখানে আরেকটা আশ্চর্যজনক ঘটনা দেখে। যেটা সে আজকে মাগরিবের পর বলে।
প্রথমতঃ আমি দেখি তার কপাল দিয়ে ঘাম ঝড়ছে। এটা রাসুলুল্লাহ ﷺ এর ঐ কথার প্রমান উনি বলেছিলেন মুমিনদের মৃত্যু সময় কপাল দিয়ে ঘাম ঝড়ে। এটা উত্তম মৃত্যুর লক্ষন।
দ্বিতীয়তঃ তার হাত ছিলো নরম, এবং জয়েন্টগুলো বাকা করা যাচ্ছিলো, এবং সেগুলো গরমও ছিলো। আমি এর আগে যত গোসল দিয়েছি কখনো এরকম দেখিনি।
এটা জানা কথা যে মৃতের শরির ঠান্ডা হয়ে যায় আর হাত পা শক্ত হয়ে যায় ও স্থির হয়ে যায়।
তৃতীয়তঃ তার ডান হাত দিয়ে শাহাদাহ দেখাচ্ছিলো। তর্জনি সোজা হয়ে আছে এবং বাকি আংগুল মুষ্ঠিবদ্ধ করা। সুবহানাল্লাহ। কি সুন্দর মৃত্যু। আমরা আল্লাহর কাছে এরকম মৃত্যু চাচ্ছি।
বন্ধুরা গল্প এখানে শেষ না।
আমার ভাই জিয়া তার আব্বাকে জিজ্ঞাসা করলো সে কি করতো?
কি জবাব দিয়েছিলো জানো?
ধারনা করেছিলাম সে হয়তো সারা রাত রাস্তায় আড্ডা দিয়ে বেড়াতো, কিংবা ডিশ টেলিভিশনে হারাম জিনিস দেখে সময় কাটাতো, অথবা সারা রাত ঘুমিয়ে নামাজ পার করে দিতো। অথবা মদ, ড্রাগ, সিগারেট এইসব?
তাহলে যা দেখছি সেগুলো কিভাবে হবে? তার জীবনের এমন পরিসমাপ্তি কিভাবে হবে, যে পরিসমাপ্তি আমরা পাঠক ভাইরা সবাই চাই? যেখানে তুমি মারা যাচ্ছো আর তুমি জান্নাতের ঘন্ধ পাচ্ছো?
তার আব্বা জবাব দিলো, “সে রাতের অধিকাংশ সময় দাড়িয়ে কাটাতো। এবং নামাজ পড়তো যতটুকু আল্লাহ তায়ালা তাকে সামর্থ দিয়েছে। আর বাসার সবাইকে ফজরের নামাজ জামাতে পড়ার জন্য ডাকা ডাকি করতো। সে ছিলো হাফেজে কোরআন। এবং হাই স্কুলে ভালো রেজাল্ট করে পড়তো।”
আমি বললাম, “আল্লাহ সত্য বলেছেন — যারা বলে, আল্লাহ আমাদের রব, এর পর তার উপর স্থীর থাকে, তাদের উপর ফেরেশতা নাজিল হয়, যারা তাকে বলে, ভয় করো না, চিন্তা করো না। বরং যে জান্নাতের ওয়াদা তোমাদের দেয়া হয়েছিলো তার সুসংবাদ শোন।
আমরা তোমাদের বন্ধু, এই দুনিয়ার জীবনে এবং আখিরাতে। সেখানে তোমাদের জন্য আছে তোমাদের যা মনে চায়। সেখানে তোমাদের জন্যে আছে যা তোমরা চাও।
এটা গাফুরুর রহিমের পক্ষ থেকে সাদরতা।" (সুরা ফুসসিলাত আয়াত ৩২)
(মূল আরবী থেকে অনুবাদ করা হয়েছে, আরবীটা পাবেন এখানে)
https://www.facebook.com/permalink.php?story_fbid=1060202600668093&id=362699180418442
#HabibTranslation